লিওনার্দোর হাফ সেঞ্চুরি


kazitarik প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১১, ২০২৪, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন /
লিওনার্দোর হাফ সেঞ্চুরি

বিনোদন ডেস্ক:
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ও মেধাবী অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। অভিনেতা ছাড়াও তিনি একজন লেখক এবং প্রযোজক। আইএমডিবি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৫৫টি সিনেমায় অভিনয় করা এই অভিনেতা ৩৮টি সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। আজ এই অভিনেতার জন্মদিন। ৫০ বছরে পা দিলেন তিনি। আজকের আয়োজন তাকে নিয়েই। লিখেছেন- জাহিদ ভূঁইয়া

প্রিয় সিনেমা
‘দ্য বয়ে’স লাইফ’। তখন আমার বয়স ১৫ বছর। এখনো প্রতিটি ঘটনা পরিষ্কার মনে আছে। সবকিছু তখন আমার কাছে একদম নতুন ছিল। রবার্ট ডি নিরো-কে সেটে পরিশ্রম ও একাগ্রতা নিয়ে কাজ করতে দেখাটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম সেরা অনুপ্রেরণামূলক অভিজ্ঞতা।

টাইটানিক
আমার মনে হয় ‘টাইটানিক’ আমাকে স্বাধীন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের চেয়ে ভিন্ন কিছু করার সুযোগ করে দিয়েছিল। ভালো পরিচালক কিংবা ভালো স্ক্রিপ্ট চেনার দক্ষতা বাড়িয়ে দিয়েছে। হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একজন অভিনেতা হিসেবে অভিনয়ে আমার দক্ষতা বেড়েছে। কিন্তু যে ধরনের কাজ আমি করতে চাইতাম, সেখানে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

মৃত্যুভয়
ভ্রমণ করতে গিয়ে কয়েকবার অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় হাঙর আক্রমণ করেছিল। তার আগে একবার প্যারাস্যুট দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। ‘এসব ঘটনা যখন ঘটেছে তখন আমার বয়স কম। তখন স্রেফ এতটুকু মনে হচ্ছিল: ধ্যাত, আজকেই কেন এরকমটা হতে হবে? আমার বয়স কম, সামনে সুন্দর জীবন পড়ে রয়েছে, খুব বাজে হলো এটা। আসলে তখন প্রাণ বাঁচানো ছাড়া অন্য কোনো গভীর চিন্তা বা আবেগ কাজ করে না। আর এই সময়ে পুরো অতীত জীবনের মুহূর্তগুলোকে চকচকে ছবি হয়ে সেকেন্ডের মধ্যে চোখের সামনে দিয়ে চলে যেতে দেখেছি। এরকম সত্যিই ঘটে জীবনে। এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরও আমার মধ্যে মৃত্যুভয় কাজ করে।

কাঁচা কলিজা
‘দ্য রেভেন্যান্ট’ সিনেমার একটি দৃশ্যে ক্ষুধার্ত অবস্থায় কাঁচা কলিজা খেতে হয়েছিল লিওনার্দোকে। ‘হ্যাঁ, খেয়েছিলাম। কারণ ওরা প্রথমে আমাকে যে নকল কলিজা দিয়েছিল, একদম কৃত্রিম দেখাচ্ছিল ওটা। তাই আসল কলিজা ব্যবহার করতে হয়েছিল। দৃশ্যটি ধারণ করতে মোট দুবার খেতে হয়েছিল আমাকে। খাওয়ার সময় আমার যে অভিব্যক্তি আপনারা পর্দায় দেখেছেন সেটা একদম খাঁটি। আমাকে কোনো অভিনয় করতে হয়নি।’

নামকরণ
অন্তঃসত্ত্বা আর্মেলিন ইনডেনবার্কেন ইতালির ফ্লোরেন্সের একটি জাদুঘরে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির চিত্রকর্ম দেখছিলেন। ঠিক তখনই প্রথমবারের মতো পেটে সন্তানের নড়াচড়া টের পান। নিজের ভেতরে লালিত সত্তা লাথি মেরে জানান দেয় তার অস্তিত্বের। তখনই আর্মেলিন অনাগত সন্তানের নাম ‘লিওনার্দো’ রাখবেন বলে মনস্থির করেন।

রুপালি পর্দা
১৯৯১ সালে ক্রিস্টিন পিটারসনের ‘ক্রিটারস থ্রি’ দিয়ে হলিউডের রুপালি পর্দায় যাত্রা শুরু করেন লিও। তবে ১৯৯২ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম বড় সুযোগ আসে, যখন পরিচালক রবার্ট ডি নিরো ‘দ্য বয়েজ লাইফ’ ছবির জন্য ৪০০ শিশুশিল্পী থেকে তাকে বাছাই করেন। ক্যারিয়ারের পরের বাঁকটি ১৯৯৭ সালে। ‘টাইটানিক’ চলচ্চিত্রে জাহাজটি ডুবে যায়, তবে তাতে জ্যাকের চরিত্রে অভিনয় করে ডিক্যাপ্রিও কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রেমিক পুরুষ হিসেবে জায়গা করে নেন। এর পর নিজেকে ভাঙার পালা। ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’, ‘গ্যাংস অব নিউইয়র্ক’ ছবিতে অভিনয়ের পর রোমান্টিক অভিনেতা থেকে অ্যাকশন হিরো বনে যান লিও। ‘দ্য অ্যাভিয়েটর’, ‘দ্য ডিপার্টেড’, ‘শাটার আইল্যান্ড’ ছবিগুলো ধীরে ধীরে তাকে অন্য মাত্রা দেয়। ৩৬ বছর বয়সে ভক্তদের জন্য তার উপহার ‘ইনসেপশন’। ২০১৫ সালে ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ ও ২০১৯ সালে ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন হলিউড’ চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের কল্যাণে ফের আলোচনায় আসেন তিনি।

অস্কার জয়
বারে বারে খুব কাছে এসেও অধরা থেকে যাচ্ছিল অস্কারের সোনালি মূর্তি। অস্কার তার ভাগ্যে আদৌ কোনোদিন জুটবে কিনা- ভক্তদের মনে জেগেছিল সেই সন্দেহও। নিন্দুকরা সরব হন তার উচ্চকিত অভিনয় নিয়ে। কিন্তু সব সমালোচনার দারুণ এক জবাবই শেষ পর্যন্ত দেন লিও। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি জয় করেন অস্কার। আলেহান্দ্রো গনজালেস ইনারিতুর ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের সুবাদে অস্কারের ৮৮তম আসরে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান লিও। এর আগে ‘হোয়াটজ ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ’, ‘দ্য অ্যাভিয়েটর, ‘ব্লাড ডায়মন্ড’ ও ‘উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’ ছবির জন্য তিনি সেরা অভিনেতার অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

পরিবেশবাদী
সুদর্শন লিও কেবল অভিনেতা, লেখক ও প্রযোজক নন; তিনি একজন শক্তিশালী পরিবেশবাদীও। অভিনয়ের বাইরে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত আছেন তিনি। অস্কার জয়ের পর মঞ্চে লিও কথা বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে। তার ভাষ্য ছিল এমন, “‘দ্য রেভেন্যান্ট’ ছবির বিষয় ছিল প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। আর সেই প্রকৃতি হয়ে উঠছে ক্রমেই উত্তপ্ত। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে এই বিপদ ঠেকাতে।”