মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ:
শিশু-কিশোর কে অবহেলা নয়। কারণ তারাই একদিন বিশ্ব জয় করবে। তাই কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত জরুরি। এমনটি মনে করেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সায়েমুল হুদা। তিনি বলেন,সন্তান শুধু আপনার না। এটা রাষ্ট্রের সম্পদ। তাদেরকে অবশ্যই তাদের মতো করে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে। ছোটবেলা থেকেই অভিভাবকদের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশ ও সমাজের সাথে মিলেমিশে চলার কৌশল শেখানো জরুরি। তাদেরকে সহপাটিদের সাথে মিশতে দিতে হবে। সব সময় চিড়িয়াখানার পাখির মত নির্দিষ্ট গণ্ডির ভিতরে না রেখে বরং সন্তানের নিজের পছন্দকে ও প্রাধান্য দিতে হবে। ভালো-মন্দ বুঝতে দিতে হবে। অতি শাসনে সন্তান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। একটা সময় দেখা যায় তারা মা-বাবাকে ছাড়া বাইরেও বের হতে পারছে না। অর্থাৎ সমাজের সাথে তারা খাপ খাওয়াতে পারছে না। এতে করে এক সময় সন্তান একরোখা হয়ে যায়। মা বাবার সাথে খারাপ আচরণ করে। ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। কৈশর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কাউন্সেলিং তাদেরকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে। সন্তানদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে, কিছুটা স্বাধীনতা না দিলে তারা পরনির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এই যে কৈশোর বয়সটা এটাই মূলত বাচ্চাদের জিবন গড়ার সময়, কাউন্সিলিং জরুরি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কর্নার কে কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনা হয়েছে। একটি বেসরকারি এনজিও “আর এইচস্টেট” কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কর্নারের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করেছে। ডাঃ মোঃ সায়েমুল হুদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন সিনিয়র নার্সকে এই কর্নারের তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব দিয়েছেন। হালিমা আক্তার নামের এই সিনিয়র স্টাফ নার্স প্রতিদিন কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কাজটি করছেন অত্যন্ত যত্নের সাথে। হালিমা বলেন, আমরা মূলত ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে যাদের বয়স তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাউন্সিলিং করছি। একই সাথে যারা সদ্য বিবাহিত তাদের কথা ভেবে ১০ থেকে ২৪ বছর পর্যন্ত এই সেবাটি অব্যাহত রেখেছি। কারণ যারা সদ্য বিবাহিত তারা কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অথবা দাম্পত্য জীবনের অনেক কিছুই জানেনা। ফলে তারা দাম্পত্য জীবনে বড় ভুল করে ফেলে। তাদেরকে আমরা কাউন্সিলিং করছি। সবচেয়ে যে বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি সেটি হল, ১০ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে যাদের বয়স তারা কিন্তু অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। এই সময়টা ছেলেদের ক্ষেত্রে নানান শারীরিক পরিবর্তন, মেয়েদের মাসিক সংক্রান্ত বিবিধ সমস্যা অব্যাহত থাকে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা কাউন্সিলিং করছি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা মা বাবা এবং সন্তানকে সামনে রেখে কাউন্সিলিং করি। প্রয়োজন বিশেষ আলাদা আলাদা কাউন্সিলিং করতে হয়। এ বয়সে মা-বাবার সাথে শারীরিক পরিবর্তন জনিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলতে সন্তানরা লজ্জা পায়। আবার মা-বাবা সন্তানদের কে লজ্জার কারণে এসব বিষয় বোঝাতে পারে না। তখন তারা সন্তানকে আমাদের কাছে নিয়ে আসে। যখন দেখি কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু কাউন্সিলিং করেই সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায় না। তখন আমরা তাদেরকে এই সমস্যা সংক্রান্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করি। কিছু কিছু সময় সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়ে অথবা ধর্ষণের শিকার হয়ে অনেক মেয়ে আমাদের কাছে আসে। সে কিন্তু মামলা করতে চায়।তবে কিভাবে মামলা করতে হবে, প্রসেসিং কি সেটা সে জানে না। তখন আমরা এসব ভুক্তভোগী মেয়েদেরকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করি। একই সাথে সে যেন প্রেগন্যান্ট না হয়ে পড়ে, সে ব্যাপারেও পরামর্শ এবং চিকিৎসা দিয়ে থাকি। আবার সদ্য বিবাহিত অনেকেই নিজের অজান্তে প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ে। অথচ তারা চায় না এই মুহূর্তে বাচ্চা নিতে। তখন আমরা তাদেরকে কাউন্সিলিং করি। ফ্যামিলি প্ল্যানিং বুঝিয়ে দেই।এ ব্যাপারে অনারারি নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)- সারা হোসেন বলেন, আমাদের অনেক কিশোর কিশোরী কর্মক্ষেত্রে আছে। তাদের কাছে কিভাবে এই বিষয়টি প্রচার করা যায় তা আমাদেরকে ভাবতে হবে। স্কুল ও হেলথ ক্লিনিক গুলোতে যদি কৈশোর স্বাস্থ্য সেবার তথ্য নিয়ে আসা যায় তবে তা কার্যকর হবে। কোথায় কোন সহযোগিতা পাওয়া যাবে, কি কার্যক্রম পরিচালিত হবে তা জানতে হবে।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এ এসএম সায়েম বলেন, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের কিশোরদের মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা।এ সংক্রান্ত শিক্ষা,জীবনের একদম শুরুতেই দেয়া উচিত। ১৫ থেকে ১৯ বছরের কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ এখনো আমরা বন্ধ করতে পারিনি। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী বিবাহিত ৫৯ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের মধ্যে।বাল্যবিবাহের জন্য স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এই সমস্ত বিষয়েও আমাদেরকে কাউন্সিলিং করা প্রয়োজন।
মূলত, কৈশোর স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র যথাযথ কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে কিশোর কিশোরী এবং সদ্য বিবাহিত নবদম্পতিদের জন্য আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। তাই প্রত্যেক বাবা-মা এবং কিশোর কিশোরীকে প্রয়োজন বিশেষ কৈশোর বান্ধব সেবাকেন্দ্রের স্বরণাপন্ন হওয়া উচিত।
আপনার মতামত লিখুন :