মগবাজার বিস্ফোরণ, ২৪ ঘণ্টায় হয়নি রহস্য উদঘাটন

কালান্তর ডেস্ক:
রাজধানীর মগবাজার ওয়ারলেস গেইট এলাকা হঠাৎ বিকট শব্দে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সঠিক রহস্য উদঘাটন হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেরই ধারণা, এসির কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে আবার অনেকেই ট্রান্সফরমারকেই দায়ী করছেন। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বাতাসে হাইড্রোকার্বন গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এই বিস্ফোরণের ঘটনায় একটা সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি আরং আউটলেটের। ভিডিওতে দেখা যায়, এক নিমিষেই যেন সব কিছু এলোমেলো করে দেয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, আউটলেটে প্রবেশের পথ দিয়ে লোকজন আসা-যাওয়া করছেন। হঠাৎ বিস্ফোরণে বিকট শব্দে ভেঙে যায় আউটলেটের কাচ। অন্ধকার হয়ে যায়। বিস্ফোরণের পর পরই লোকজন ছুটোছুটি করতে দেখা যায়।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকার তিন তলা ভবনে বিস্ফোরণ এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে এক শিশু ও তার মাসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেন, বোমা হামলা মনে করে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে সব বিষয় মাথায় রেখেই তারা তদন্ত করবেন।
এটা স্পষ্ট হওয়ার জন্য আমরা দুয়েকদিন অপেক্ষা করি। বিস্ফোরণের লক্ষ্য ছিল এদিকটা (বাড়ির উত্তর) এবং এটি একমুখী ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। সাধারণত এটা যদি বিস্ফোরক হত, তাহলে বহু দিকে মানে, তিন চার দিকে যেত। আর এই ঘটনায় গ্লাসের ভাঙা টুকরা ছাড়া আমরা অন্য কিছু খুঁজে পাইনি।
একই সঙ্গে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিরোধ নিরূপণে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর। সোমবার সন্ধায় গঠিত সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্র্তৃপক্ষ।
প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বাতাসে ‘হাইড্রোকার্বন’ গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সোমবার দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পর তিনি বলেন, আমরা গ্যাস ডিটেকটর নিয়ে গিয়েছিলাম। এখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের আলামত আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করেছি- এটা হাইড্রেকার্বন ডিটেক্ট করে। এখানে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এর আগে ফায়ার সার্ভিস বলেছিল, মগবাজার আড়ংয়ের উল্টো দিকে আউটার সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের তিনতলা ওই ভবনে গ্যাস জমেই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে। তবে তদন্ত শেষ হবার আগে বিস্ফোরণে উৎস সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না বলেও জানান তিনি।
এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী একজন বিস্ফোরণের ভয়াবহতার কথা জানিয়ে বলেন, আচমকা বিকট শব্দে কানে তালা লেগে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুড়াহুড়ি করে নিচে নামার সময় কান বন্ধ হয়ে যায়। আমার মাথা কাজ করছিল না। তবে সেন্স ছিল। নিচে নেমে দেখলাম, অবিরামভাবে উপর থেকে কাচের বড় বড় টুকরো ভেঙে পড়ছে। বড় বড় সব ইট-পাথর ও কাচের টুকরো গুলো পেরিয়ে কোনোমতে বের হয়ে আসছি।
মগবাজারের ঘটনাটি কোনো ধরনের নাশকতা কি না, জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এ বিষয়ে জানতে দুই একদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে মতামত দেবেন। তবে, আমরা যতটুকু দেখেছি, তা (নাশকতা) মনে করে শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
এর আগে মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনায় কোনো ধরনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, এতে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা থাকলে ঘটনাস্থলে স্প্লিন্টার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো এবং মানুষ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। এটা গ্যাস চেম্বার থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে। তবে সঠিক কারণ জানতে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ কাজ করছে।
কীভাবে এবং কোথা থেকে বিস্ফোরণ হলো তা খতিয়ে দেখতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ফায়ার সার্ভিসের এক্সপার্টরা রাতেই কাজ শুরু করেছেন।
একই সঙ্গে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। রোববার রাতে গঠিত ওই তদন্ত কমিটি আজ সোমবার সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক (অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধন জানিয়েছেন। সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্র্তৃপক্ষ।
এছাড়াও তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে শর্মা হাউজে দুটি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। এই ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছেন।
এখন পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুসহ এ ঘটনায় ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩ জনের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারিতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢামেকের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়েছে ৩২ জনকে এবং বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয় ১৭ জনকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। এ সময় ফ্লাইওভার এবং নিচের সড়কে যানজটে আটকে থাকা বাসসহ অন্যান্য গাড়িতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। শব্দে ভেঙে যায় যানবাহনের জানালার কাচ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত ভবনটির নিচতলায় সিঙ্গার শো-রুম, শর্মা হাউস ও গ্র্যান্ড কনফেকশনারি দোকান রয়েছে।
ঘটনাস্থলের পাশের একজন দোকানি বলেন, বিস্ফোরণের সময় সিঙ্গার শো-রুমের ভেতর থেকে জেনারেটর উড়ে এসে রাস্তায় বাসে পড়ে। এতে দুটি বাসের কাচসহ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিস্ফোরণে ৯ মাসের কন্যাশিশু সুবহানা ও তার মা জান্নাতের (২৫) মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা হলেন- স্বপন, এফএম রেডিও ধ্বনির সাবেক কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান (২৯), আবুল কাশেম এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x