স ম আলাউদ্দীন বেঁচে থাকলে সাতক্ষীরা হতো দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চল
মোঃখলিলুর রহমান :
সাতক্ষীরার গণ মানুষের নেতা, সাবেক এমএলএ, দৈনিক পত্রদূত, ভোমরা স্থল বন্দর, চেম্বার অব কমার্স, সিএন্ডএফ, নারকেলতলা শ্রমিক ইউনিয়ন, সাতক্ষীরা ট্রাক মালিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক স্কুল এন্ড কলেজ, আলাউদ্দীন ফুডস্, কৃষি গবেষণা কেন্দ্রসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা স ম আলাউদ্দীনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ করেছেন ভোমরা স্থল বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সি এন্ড এফ এর সাবেক সভাপতি, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আশরাফুজ্জামান আশু।
আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, স ম আলউদ্দীন ১৯৯৬ সালে পবিত্র হজ্জব্রত পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ফেডারেশন চেম্বার অব কমার্সের কাজে স ম আলাউদ্দীনসহ ৩ জনের একটি প্রতিনিধিদল হায়দ্রাবাদ যাওয়ার কথা ছিল। জাপান যাওয়ার কথা ছিল স ম আলাউদ্দীনের। কিন্তু দু:খের বিষয় তার আগেই ১৯ জুন ১৯৯৬ রাত্র ১০টা ২৩ মিনিটে আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন।
স ম আলাউদ্দীন ছাত্র অবস্থায় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অধিকার আদায়ের লক্ষে আন্দোলন করেছেন এবং দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকাল উত্তরণের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন নির্ভিক সাহসী, তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহু প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তার মধ্যে কোন অহংকার ছিলো না। সাংগঠনিক ক্ষমতাবলেই তিনি দলের নেতা হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সুবক্তা। তার সুমধুর তেজস্বী কণ্ঠের বক্তব্য মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিত। তার আবেগময় বক্তৃতা জনগণকে সহজেই আকৃষ্ট করতো। যুক্তিবাদী বলিষ্ঠ করে একজন বক্তা হিসাবে রাজনীতিতে তার যথেষ্ট সুনাম ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার আবদান ছিল চির স্মরণীয়। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবন্ধ থাকবে। ১৯৭০ সাথে জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে জাতীয় পরিষদে ১৬৭ জন এবং প্রাদেশিক পরিষদে ২৯৮ জন নির্বাচিত হন। যাদের প্রায় সকলেই ভারতে চলে যান। গ্রেপ্তার হওয়া এবং আত্মসমর্পন করা ছাড়া মাত্র ৯জন অস্ত্র হাতে দেশের মধ্যে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স ম আলাউদ্দীন তাদের মধ্যে অন্যতম। স ম আলাউদ্দীন সাতক্ষীরার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। কথা ও কাজে জীবনমুখি প্রভাব সুস্পষ্ট। রাজনৈতিক অংগনে পদাচারণা ছাড়াও তিনি বহু সমাজ সেবামূলক কাজ করেছেন। সীমান্ত জেলা শহর সাতক্ষীরা থেকে উত্তর দিকে ৬ কিলোমিটার দূরে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের পাশে এবং তার বিস্কুট ফ্যাক্টারির কাছে তিনি ১৯৯৪ সালে নগরঘাটা শিশু হাসপাতালের জন্য ১০ কাঠা জমি দান করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বুকে লালন করে গরীব মানুষের সন্তানদের উৎপাদনে আগ্রহী করতে গড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক স্কুল এন্ড কলেজ। তিনি ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন। ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠায় তার ছিল গুরত্বপূর্ণ। তিনি ভোমরা স্থল বন্দর ব্যবহারকারি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সর্বপ্রথম স্থল বন্দর চালু হয় এবং এটি চালু করার জন্য তিনি দীর্ঘ ১২-১৩ বছর সংগ্রাম করেছেন। সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ ফেডারেশন চেম্বার অব কমার্সের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক মালিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি নারকেলতলা ট্রাক, ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের আহবায়ক ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সাতক্ষীরা-১ এর পরিচালক। তার প্রচেষ্টায় সাতক্ষীরার বিনেরপোতায় কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। একজন সুসাহিত্যিক, বরেণ্য লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে তার খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে।
স ম আলাউদ্দীন আজ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকলে সাতক্ষীরা হতো দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চল। সাতক্ষীরার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়েই আজীবন চিন্তা ও কাজ করেছেন স ম আলাউদ্দীন। সাতক্ষীরার মানুষ তাকে চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।