‘বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতি নয়, কার্যকর পদক্ষেপ চাই
বিজ্ঞপ্তি :
৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এই বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম ‘বাস্ততন্ত্রের পুনরুদ্ধার করা’।বিশ্বজুড়ে ভারসাম্য হারানো প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার জানিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ বছর পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। আদিকাল থেকেই পুরান ঢাকার প্রাণ-প্রকৃতি, অর্থনীতি এবং পরিবেশের অপরিহার্য অংশ ছিল বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল। যা এই অঞ্চলের মানুষ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য স্বচ্ছ পনি, নির্মল বাতাসসহ পরিবেশ সজীব রাখার সকল উপাদানের জোগান দিত। পুরান ঢাকার বেশীরভাগ মানুষ জীবন জীবিকার জন্য নির্ভরশীল ছিল এই আদি চ্যানেলের উপর। কালের আবর্তে প্রশাসনের অবহেলায় দখলে-দূষণে এক সময়ের প্রমত্ত আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল মৃতপ্রায় একটি আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। পুরান ঢাকার প্রাণ-প্রকৃতি, এবং পরিবেশের উপর বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেলের গুরুত্ব বিবেচনায় বিভিন্ন সময় রাষ্টীয় ভাবে এই নদীকে পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও বাস্তবে এর কোন কাজ হয় নাই। এমতবস্তায় ‘আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধারে শুধু প্রতিশ্রুতি নয়,চাই কার্যকর উদ্যোগ’। এই দাবিতে
পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ -এর উদ্যোগে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২১ উপলক্ষে আজ ৫ জুন ২০২১, শনিবার, সকাল ১০:৩০ টায় রাজধানীর নবাবগঞ্জ পার্ক সংলগ্ন বেঁড়ীবাধে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ-এর সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক জি.এম রোস্তম খান, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সহ-সভাপতি, মোঃ সেলিম, তৌহিদুল ইসলাম মাতিন, সচেতন নাগরিক সমাজের সভাপতি, জাহাঙ্গীর আদেল, নিরাপদ চিকিৎসা চাই সংগঠনের মহাসচিব, উম্মে সালমা, আমরা দূর্বার এর সভাপতি আব্দুস সালাম সময়, বিডি ক্লিক এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম টাব্বুস, নদী বিষয়ক সামাজিক সংগঠন নোঙ্গরের নাফিজ ইকবাল, সুজনের মাসুম হোসেন, জার্ড এর চেয়ারম্যান মাহমুদ উল্লাহ রানা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে একসময় লঞ্চ, পণ্যবাহী বড় বড় ট্রলার-নৌকা চলত, জেলেরা দল বেঁধে মাছ ধরত। এই অঞ্চলে মানুষের দৈনন্দিন স্বচ্ছ পনির যোগান দিত এই নদী। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে ক্রমবর্ধমান দূষণ ও অব্যাহত আগ্রাসনের ফলে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলটি দখল হয়ে ছোট হতে হতে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ ভূমিকা না থাকায় বেপরোয়া দখল-ভরাটের কারনে চ্যানেলটি এখন মৃত প্রায়। এক সময় প্রবাহমান থাকলেও এখন বসতি, শিল্প-কারখানা, নির্মান সামগ্রী, হাসপাতাল বর্জ্য ফেলে সমগ্র চ্যানেলটিকে ময়লার ভাগাড়ে পরিনত করেছে যা অত্র এলাকার পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। একদিকে বর্জ্য ফেলে ভরাট অপর দিকে সেই বর্জ্য পুড়িয়ে দুষণ করা হচ্ছে আদি চ্যানেল এলাকার মাটি,পানি এবং বাতাসকে। প্রাকৃতিক বাস্ততন্ত্রের কারণে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক ঢাকাবাসীর দেহে কোন না কোনভাবে প্রবেশ করছে। ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, নগরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখা, বর্ষা মৌসুমে শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন, পানির চাহিদা পূরণ ও আবর্জনা পরিশোধনে গুরুত্ব ভুমিকা রাখতে পারে এই নদী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও আদি বুড়িগঙ্গার নদী পুনরুদ্ধারে কেবল মাত্র প্রতিশ্রুতি ছাড়া কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না! সমাবশে থেকে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল খনন করে এর সুস্থ, স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।